ঢাকা,সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪

চকরিয়ায় বদরখালী সমিতির নির্বাচনে ভোট বাণিজ্যে কোটি টাকার লেনদেন!

বদরখালী সমিতির নির্বাচনে বিজয়ী সভাপতি, সহ-সভাপতি, সম্পাদক ও পরিচালকবৃন্দ

এম.জিয়াবুল হক, চকরিয়া ::  অবশেষে সকল জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে শনিবার ২৮ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত হয়েছে দক্ষিণ এশিয়ার বৃহত্তম সমবায়ী প্রতিষ্ঠান কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার উপকুলীয় জনপদের বদরখালী সমবায় কৃষি ও উপনিবেশ সমিতির বহুল প্রতিক্ষিত ত্রি-বার্ষিক নির্বাচন। বদরখালী কলোনীজেশন উচ্চ বিদ্যালয়ে শনিবার সকাল ১০টা থেকে বিকেল চারটা পর্যন্ত শান্তিপুর্ন পরিবেশে একটানা ভোটগ্রহন অনুষ্ঠিত হয়। বিকাল থেকে ভোট গণনা শেষে রাত তিনটার দিকে ভোটের ফলাফল ঘোষণা করেন নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সভাপতি ও চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নূরুদ্দীন মুহাম্মদ শিবলী নোমান।

ঘোষিত ফলাফলে চেয়ার প্রতীকে ততৃীয় বারের মতো সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন বর্তমান সভাপতি হাজী নুরুল আলম সিকদার। তিনি পেয়েছেন ৬৭১ ভোট। নিকটতম হয়েছেন দেলোয়ার হোছাইন এমএ। তিনি গোলাপ ফুল প্রতীকে পেয়েছেন ৬৪৪ ভোট। সহ-সভাপতি পদে বাই সাইকেল প্রতীকে নির্বাচিত হয়েছেন আলী মোহাম্মদ কাজল। তিনি পেয়েছেন ৭৬৪ ভোট। নিকটতম হয়েছেন আনছারুল করিম। তিনি মই প্রতীকে পেয়েছেন ৫৫১ ভোট। সম্পাদক পদে নির্বাচিত হয়েছেন নুরুল আমিন জনি। তিনি চাকা প্রতীকে পেয়েছেন ৭৮৬ ভোট। নিকটতম হয়েছেন মোহাম্মদ আলী চৌধুরী। তিনি দেয়াল ঘড়ি প্রতীকে পেয়েছেন ৫৩৩ ভোট।

সম্পাদকীয় পদ ছাড়াও সমিতির পরিচালক (সদস্য) পদে নির্বাচিত হয়েছেন ৯জন। তারা হলেন, আবদুল আজিজ (বাল্ব প্রতীক, ভোট ৫৬৯), হাফেজ আহমদ (তারা প্রতীক, ভোট ৫৬১), জসিম উদ্দিন টিটু (মোমবাতি প্রতীক, ভোট ৫২০), আহমদ আলী মাঝু (টেবিল প্রতীক, ভোট ৫১২), মোহাম্মদ ইছহাক (চশমা প্রতীক, ভোট ৪৮২), আলী আকবর (আম প্রতীক ভোট ৪৭৫), কুতুব উদ্দিন (চিংড়ী প্রতীক, ভোট ৪৬২), এ.এইচ.এম পারভেজ প্রকাশ মামুন (আপেল প্রতীক, ভোট ৪৫৮) ও আবু তাহের (বাঘ প্রতীক, ভোট ৪৪৬)। নির্বাচনে সভাপতি, সহ-সভাপতি, সম্পাদক ও পরিচালক (সদস্যসহ) মোট ১২টি পদে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়।

অবশ্য অনুষ্ঠিত নির্বাচনে মোট প্রার্থী ছিলেন ৩৪জন। তাদের মধ্যে সভাপতি পদে তিনজন, সহ-সভাপতি পদে দুইজন, সম্পাদক পদে তিনজন ও পরিচালক পদে ২৬জন ভোটযুদ্ধে ছিলেন। সমিতির মোট ভোটার ১৫০০ জন। তাদের মধ্যে ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছেন ১৩৩৪ জন।

নির্বাচনে ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছেন একজন ভোটার বলেন, এবারের নির্বাচনে যোগ্য প্রার্থীর মুল্যায়ন হয়নি। সবখানে টাকার খেলা জয় পেয়েছে।

তপশীল ঘোষণার পর থেকে বদরখালী বাজার ও আশপাশ এলাকা নির্বাচনী আমেজে সরগরম হয়ে উঠে। অধিকাংশ প্রার্থী টাকা দিয়ে ভোট কিনেছেন। তারা বিজয়ীও হয়েছে। আবার কিছু প্রার্থী ভোট কিনেও পেরে ওঠেনি, বেশি টাকার কাছে কম টাকা পরাজিত হয়েছে।

স্থানীয়রা জানিয়েছে, বদরখালী সমবায় কৃষি ও উপনিবেশ সমিতির নির্বাচনে একজন সভাপতি প্রার্থী এক থেকে দেড় কোটি টাকা, একজন সম্পাদক প্রার্থী ৮০ থেকে এক কোটি টাকা পর্যন্ত খরচ করেছে। পাশাপাশি একজন সহ-সভাপতি প্রার্থী ভোট পেতে ৫০ থেকে ৭০ লাখ টাকা পর্যন্ত খরচ করেছেন। তাতে শেষ নয়, পরিচালক বা সাধারণ সদস্য পদের জন্য একজন প্রার্থী কমপক্ষে ৫ থেকে ১০ লাখ টাকা ব্যয় করেছেন। তবে, এবারের নির্বাচনে কিছু ক্লিন ইমেজের প্রার্থীও বিজয়ী হয়েছেন।

সচেতন জনসাধারণের প্রশ্ন, সমিতিতে কী মধু আছে? এত টাকা খরচ করে কোন সোনার হরিণের জন্য ছুটেছেন প্রার্থীরা?

তবে, কাঙ্কিত পদে বিজয়ী হতে মোটা দাগের টাকা খরচের অভিযোগ উঠলেও ভোটগ্রহণ কিন্তু সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষভাবে সম্পন্ন হয়েছে বলে অভিমত প্রকাশ করেছেন ভোটার ও সাধারণ জনতা। নির্বাচন সুশৃঙ্খলভাবে সম্পন্ন করতে স্থানীয় প্রশাসন যথেষ্ট আন্তরিক ছিল। ভোটাররাও স্বতঃস্ফূর্তভাবে কেন্দ্রে উপস্থিত হয়ে ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছেন। #

পাঠকের মতামত: